গত সপ্তাহে, EUR/USD পেয়ার 1.1560–1.1650 রেঞ্জের মধ্যে ট্রেড করেছে এবং এই পেয়ারের মূল্য একাধিকবার এই করিডোরের সীমানা টেস্ট করেছে। শুক্রবার, ট্রেডাররা এই পেয়ারের মূল্যকে 1.1650-এর রেজিস্ট্যান্সের উপরে কনসোলিডেট করার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয় এবং মূল্য 1.1625-এ থাকা অবস্থায় সাপ্তাহিক ট্রেডিং শেষ হয়। সোমবার, অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডারে তেমন কিছু না থাকা সত্ত্বেও, EUR/USD পেয়ারের ক্রেতারা আবারও মূল্য 1.17 এর লেভেলে থাকা অবস্থায় মার্কেটে এন্ট্রির চেষ্টা করছে। একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন ছিল মার্কিন সিবি লিডিং ইনডেক্স, যা ঋণাত্মক ফলাফলই প্রদর্শন করেছে (-0.3%)। তবে এটি স্বল্প গুরুত্বসম্পন্ন প্রতিবেদন হওয়ায় এই পেয়ারের মূল্যের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারেনি।
বর্তমানে বাণিজ্য আলোচনার দিকে সবার দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত রয়েছে। "জিরো আওয়ার" অর্থাৎ 1 আগস্ট আসতে আর মাত্র 10 দিন বাকি, যেদিন নির্ধারিত পরিমাণ শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা। যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট গত সপ্তাহে বেশ কয়েকটি বড় চুক্তির ঘোষণা দেন, তবে এর পর থেকে খুব একটা অগ্রগতি হয়নি।
ট্রেডাররা মূলত বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদারদের (ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা) সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে আগ্রহী। তাই এসব দেশকে ঘিরে আসা খবর EUR/USD পেয়ারের মূল্যের উপর তাৎক্ষণিকভাবে প্রভাব ফেলে। তবে এসব খবরে স্পষ্টতা না থাকায়, এই পেয়ারের মূল্য মূলত উপরের করিডোরে রেঞ্জের মধ্যেই রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, শুক্রবার খবর আসে যে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনায় নতুন দাবি তুলেছেন—তিনি সব ইউরোপীয় পণ্যের ওপর ন্যূনতম 15%-20% শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দেন এবং ইউরোপীয় গাড়ির ওপর বিদ্যমান 25% শুল্ক বহাল রাখেন। ব্লুমবার্গের এই অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন (যা ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে প্রথম প্রকাশিত হয়েছে) প্রকাশের পর এই পেয়ারের মূল্য কয়েক ডজন পয়েন্ট কমে গিয়ে 1.1625-এ যাওয়ার পর শুক্রবারের সেশন শেষ হয়।
তবে আজ মার্কেটে আবারো আশাবাদ ফিরে এসেছে—যদিও এর পেছনে কোনো নির্দিষ্ট কারণ নেই। সামগ্রিক মন্তব্য ও যাচাই না হওয়া (অপ্রমাণিত) খবরের ভিত্তিতে ঝুঁকি গ্রহণের প্রবণতা বেড়েছে।
বিশেষ করে, ব্লুমবার্গের মতে, শুধু নতুন করে শুল্ক এড়ানোর জন্য ব্রাসেলস সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি অসম চুক্তিও মেনে নিতে প্রস্তুত। আলোচনাকারী দলের সূত্রে সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের আগের দিন, মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক CBS-এর এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ঘোষিত সময়সীমার (অর্থাৎ 1 আগস্টের মধ্যে) আগেই ওয়াশিংটন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করতে পারবে—এ ব্যাপারে তিনি আত্মবিশ্বাসী। তিনি আরও বলেন, "আগামী কয়েক সপ্তাহ ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে," কারণ ট্রাম্প প্রশাসন অন্যান্য বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গেও কয়েকটি বড় চুক্তি সম্পন্ন করতে যাচ্ছে। মনে করিয়ে দেওয়া দরকার, ট্রাম্প নিজেই বলেছেন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সাথে বৃহৎ চুক্তি সম্পন্ন করার "খুব কাছাকাছি" পৌঁছে গেছে।
এই ধরনের মন্তব্যের ফলে মার্কেটে ঝুঁকি গ্রহণের প্রবণতা বেড়ে যায় এবং EUR/USD পেয়ারের মূল্য 1.17 লেভেলের দিকে এগিয়ে যায়।
তবে সমস্যা হলো, এই উৎসাহব্যঞ্জক তথ্য ফাঁস ও আশাবাদী বক্তব্য মূলত স্বল্পস্থায়ী মৌলিক প্রভাবক। যদি আলোচনাকারীরা চুপচাপ থাকে, তাহলে মার্কেটে চাপ দিন দিন বাড়তেই থাকবে। ফলে EUR/USD পেয়ারের ক্রেতাদের জন্য পজিশন হোল্ড করে রাখা কঠিন হয়ে উঠবে।
তদুপরি, এমনকি ফাঁস হওয়া তথ্যেও পুরোপুরি "ইতিবাচক" বার্তা নেই। ব্লুমবার্গ সূত্র অনুযায়ী, যদিও ইইউ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র 1 আগস্টের আগেই একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে তৎপর এবং ব্রাসেলস একটি অসম চুক্তিও মেনে নিতে পারে, তবুও আলোচনায় এখনো কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যকার বাণিজ্য আলোচনার ফলাফলও এখনো পরিষ্কার নয়। 17 জুলাই পঞ্চম দফার আলোচনা শেষ হয়েছে, তবে ফলাফল নিয়ে কোনো অফিসিয়াল বিবৃতি আসেনি।
এই প্রেক্ষাপটে, EUR/USD-এর মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় "আস্থা" রাখার সময় এখনো আসেনি, যদিও ক্রেতারা পরপর দ্বিতীয় দিন এই পেয়ারের মূল্যকে 1.1650-এর রেজিস্ট্যান্স অতিক্রম করানোর চেষ্টা করছে।
টেকনিক্যাল দৃশ্যপটও চলমান অনিশ্চয়তার প্রতিফলন ঘটাচ্ছে। পরপর দুই দিন (শুক্রবার ও সোমবার) EUR/USD পেয়ারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী মোমেন্টাম দেখা গিয়েছে। তবে দৈনিক চার্টে এই পেয়ারের মূল্য এখনো বলিঙ্গার ব্যান্ডসের নিচের ও মাঝামাঝি লাইনের মধ্যে রয়েছে, কুমো ক্লাউডের উপরে থাকলেও এখনো টেনকান-সেন ও কিজুন-সেন লাইনের ওপরই রয়েছে। H4 টাইমফ্রেমে, এই পেয়ারের মূল্য বলিঙ্গার ব্যান্ডসের মাঝামাঝি ও উপরের লাইনের মধ্যে রয়েছে, টেনকান-সেন ও কিজুন-সেন লাইনের উপরে, তবে কুমো ক্লাউডের নিচে রয়েছে। আমার মতে, বুলিশ প্রবণতা নিশ্চিত করতে EUR/USD পেয়ারের ক্রেতাদের 1.1700 রেজিস্ট্যান্সের (D1 চার্টে বলিঙ্গার ব্যান্ডসের মাঝের লাইন) উপরে মূল্যের কনসোলিডেশন করাতে হবে। এর ফলে এই টাইমফ্রেমে ইচিমোকু সূচক একটি বুলিশ "প্যারেড অব লাইনস" সিগনাল গঠন করবে এবং এই পেয়ারের মূল্য বলিঙ্গার ব্যান্ডসের মাঝামাঝি ও উপরের লাইনের মধ্যে চলে যাবে।
তবে এর জন্য প্রাসঙ্গিক মৌলিক পটভূমির সহায়তা প্রয়োজন। যদি এমন সহায়তা না থাকে, তবে এই পেয়ারের মূল্য সম্ভবত পুনরায় তার "কার্যকর" রেঞ্জ 1.1560–1.1650-এ ফিরে যাবে, যেখানে আবারো সাইডওয়েজ মুভমেন্ট দেখা যেতে পারে।